ফেডারেল সিস্টেমের কর্মকর্তারা নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা তৈরির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিত মোটেই দেরি করেননি। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিদের মতে, এটি মার্কিন ডলারের আধিপত্য নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা বাজারে প্রভাব ফেলছে যার সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কে পেরে উঠতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। অন্যান্য দেশের ডিজিটাল মুদ্রাও এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে।
আগামী পাঁচ বছরের জন্য ডিজিটাল ডলারের ভাগ্য নির্ধারিত
প্রাথমিক ভাবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ধরনের একটি মুদ্রার ইস্যু যুক্তিসঙ্গত কিনা সে সম্পর্কে দৃঢ় সিদ্ধান্তে আসেনি এবং বলেছিল যে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন এটি হোয়াইট হাউস এবং কংগ্রেসের সমর্থন ছাড়া কাজ করতে চায় না। তাই অদূর ভবিষ্যতে ডিজিটাল মার্কিন ডলার ছাড়ার সম্ভাবনা ছিল না।
যাইহোক, মনে রাখতে হবে যে সরকার-সমর্থিত ডিজিটাল মুদ্রা (CBDC নামে পরিচিত) নিয়ে আয়োজিত সভার ৩৫-পৃষ্ঠার বিস্তারিত মার্কিন ফেডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপকে চিহ্নিত করে কারণ দেশটি ডিজিটাল সম্পদের নিয়ে আরও অনুসন্ধান করতে চায়। একটি বিবৃতিতে সভার ফলাফল পরিস্কার হয়ে যায় যে মুদ্রা নীতি কর্তৃপক্ষ চান যে আইনপ্রণেতারা ডিজিটাল এই মুদ্রা ইস্যু করা নিয়ে একটি পৃথক আইন গ্রহণ করবেন।
ফেড নথিতে বলা হয়েছে "CBDC এর প্রবর্তন আমেরিকান অর্থনীতিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবনের প্রতিনিধিত্ব করবে।"
ফেড এই বিষয়ে পাবলিক সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মার্কিন-সমর্থিত মুদ্রার বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য সুবিধার রূপরেখা দিয়েছে, যার মধ্যে আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায় ডলারের প্রভাবশালী মুদ্রা থাকার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ রয়েছে। প্রতিনিধিরা আরও বলেন যে CBDC ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে, আর্থিক প্রবেশাধিকার বাড়াতে পারে এবং নতুন প্রযুক্তিতে ডলারের ব্যবহার সহজ করতে পারে।
যাইহোক, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্ভাব্য নেতিবাচক পরিণতির বিষয়েও সতর্ক করেছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রথাগত ব্যাংকিং সিস্টেম থেকে আমানতের বহিঃপ্রবাহ এবং আর্থিক সংস্থাগুলির উপর আরও গুরুতর চাপের সম্ভাবনা বৃদ্ধি। নাগরিকদের ব্যক্তিগত লেনদেনের ক্ষেত্রে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ থাকতে পারে বলে গোপনীয়তাও একটি বড় প্রশ্ন হয়ে উঠছে।
প্রতিবেদনে এই বিতর্কিত সমস্যাগুলি কীভাবে সমাধান করা যেতে পারে তার কিছু বিশদ বিবরণ প্রদান করেছে এবং মার্কিন ফেডকে জানানো হয়েছে যে "ভোক্তাদের গোপনীয়তা রক্ষা এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপ রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মধ্যে একটি উপযুক্ত ভারসাম্য খুঁজে বের করতে হবে।"
উপরন্তু, এই নতুন অর্থব্যবস্থার অবকাঠামো হ্যাকারদের জন্য একটি লোভনীয় লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠতে পারে। এইভাবে, ফেডের CBDC সুরক্ষা "বিশেষ ভাবে চ্যালেঞ্জিং" হতে পারে, কারণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এটিতে "বিদ্যমান অর্থপ্রদান পরিষেবার চেয়ে বেশি ঝুঁকি" থাকবে৷
একজন ফেড কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মন্তব্যের সময়সীমার পার হওয়ার পরে পরবর্তী পদক্ষেপগুলি মূল্যায়ন করবে। তবে তিনি অনুষ্ঠান শুরুর তারিখ জানাননি।
ভবিষ্যৎ কৌশলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং ভীতিকর বিষয় হল ব্যাংক নয় এমন কোম্পানির অংশগ্রহণের সম্ভাবনা। ফেড প্রতিনিধিরা উল্লেখ করেছেন যে অ্যাকাউন্ট খোলা এবং CBDC অর্থপ্রদানের সুবিধার্থে কর্তৃপক্ষ সম্ভবত ব্যক্তিগত খাতের মধ্যস্থতাকারীদের উপর নির্ভর করতে পারে, যা প্রথাগত ঋণদাতা বা নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান হতে পারে।
এটি সম্ভবত প্রোটোকলের সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর মধ্যে একটি, যা বাস্তবায়িত হলে, ডলারের জন্য এবং শেষ পর্যন্ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর পরিণতি হতে পারে।
যাইহোক, প্রকাশিত নথিটিকে মে মাসে ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের সাথে নিজেদের আরও বেশি অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দিকে চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের সিদ্ধান্তমূলক দৃষ্টিভঙ্গির ফলাফল হিসেবে দেখছেন অনেকেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিটাল মুদ্রা পরিচালনা করতে পারে এমন প্রযুক্তির উপর একটি পৃথক নথি ফেব্রুয়ারিতে বোস্টন ফেড থেকে প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নথিটি প্রয়োজনীয় কারণ সারা বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো, বিশেষ করে পিপলস ব্যাংক অফ চায়না, তাদের ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ে ছুটে চলছে৷
মনে রাখা উচিত যে চীন এই বছর ডিজিটাল ইউয়ানের একটি পাইলট প্রকল্প চালু করেছে এবং ফেব্রুয়ারিতে বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিক গেমসে এর ব্যবহার ঘোষণা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে চীন এবং অন্যান্য দেশ যারা প্রথম ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ে কাজ করেছিল তারা অন্যান্য দেশের জন্য মান নির্ধারণ করতে পারে, কারণ বিভিন্ন দেশের ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থাগুলোকে শেষ পর্যন্ত আন্তঃসীমান্ত অর্থপ্রদান ব্যবস্থার সমন্বয় করতে হবে।
আরও কয়েক বছর ডিজিটাল মার্কিন ডলার চালু না হলেও ফেডের এই গবেষণা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, কারণ অনেক দেশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একীভূত হওয়ার জন্য তাদের সিস্টেমগুলোকে মানিয়ে নিতে চাইবে৷
যাইহোক, যদি ইউয়ান ডিজিটাল মুদ্রার নেতৃত্ব দেয়, তাহলে চলমান অর্থপ্রদান ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রাখতে ডলারকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। এবং বিশ্ব মুদ্রা হিসাবে ডলারের অবস্থাকেও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করার সম্ভাবনয়া বাড়বে৷ আগামি দুই বছরের মধ্যেই, গ্রিনব্যাক এই মর্যাদা হারাতে পারে।
ইতোমধ্যে, মার্কিন ফেডের ইস্যু করা ডিজিটাল ডলারের অনুপস্থিতিতে, প্রাইভেট কোম্পানিগুলো স্টেবল কয়েন আকারে নিজস্ব সংস্করণ চালু করেছে এবং তার মুজুদ রাখছে যাতে পরবর্তীতে ফিয়াট মুদ্রার বিপরীতে ওয়ান-টু –ওয়ান ভিত্তিতে কয়েন বিনিময় সম্ভব হয়৷
মনে হচ্ছে এই প্রক্রিয়াটি ক্রিপ্টো মার্কেট এবং বিশেষ করে ডেফি (ব্লকচেইনে বিকেন্দ্রীভূত অর্থায়নের একটি ব্যবস্থা) দ্বারা সম্ভব হয়েছে। তবে ক্রিপ্টোর মত, কোম্পানিগুলোর "স্টেবল কয়েন" ব্লকচেইনের সুবিধা, যেমন নাম প্রকাশ না করার গ্যারান্টি এবং ডেটা নিরাপত্তার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থেকে বঞ্চিত। রিজার্ভের রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও সীমাবদ্ধতা ছাড়া, এই ধরনের "স্টেবল কয়েন" -এর মূল্য অনুমান করা প্রশ্নবিদ্ধ। তবুও, স্টেবল কয়েন বিদ্যমান এবং বড়সড় কোন চুরি না হলে এটি বাজারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।